সাহিত্যের রূপ ও রস
উদ্দেশ্য
এই পাঠ শেষে আপনি__
* সাহিত্যের রূপ বা গঠনকৌশল সম্পর্কে ধারণা ব্যক্ত করতে পারবেন।
* সাহিত্যের রস বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে লিখতে পারবেন।
* সাহিত্যের স্টাইলের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন।
* রূপ ও রসের ম্বতত্র প্রকৃতি বিষয়ে আলোকপাত করতে সক্ষম হবেন।
প্রাককথন
পূর্ববর্তী পাঠে (পাঠ-১) আমরা সাহিত্যের রূপ বলতে তার আঙ্গিক বা বিভিন্ন শাখা (Form) বুঝিয়েছি। বর্তমান পাঠে রূপ বলতে সাহিত্যের অবয়বধর্মের সাধারণ বৈশিষ্ট্য আলোচিত হবে। রস বলতে সাহিত্যের বিষয়বস্তুর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হবে। এ-ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাহিত্য আঙ্গিকের ধারণা ও মতবাদের বিশেষণ স্থান পাবে।
আমাদের চার পাশের দেখা জগৎ প্রধানত দৃশ্যময় ও চিত্রময়। অর্থাৎ বিশ্বজগৎ আমাদের কাছে ধরা দেয় তার রূপ নিয়ে। মানুষ, প্রকৃতি-নদী-বৃক্ষ-সযুদ্র-সবকিছুই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে স্বরূপে । সেই রূপ প্রত্যক্ষ করার পর বিচিত্র অনুভূতি, কল্পনা ও স্বপ্নের জন্ম হয় মানুষের মনে। বাইরের জগৎ ও জীবনের যে সব উপাদান সাহিত্য স্রষ্টার মানস-লোকে সঞ্চিত হতে থাকে, সেগুলো সৃষ্টির এক অনুকূল পরিবেশ রচনা করে। এই সৃষ্টিই সাহিত্য ।
সাহিত্য উপভোগ ও বিচারের ক্ষেত্রে ভাব ও রূপ শব্দ দুটি আমরা প্রায়শ ব্যবহার করি। এই ভাব ও রূপের পরম ও অনিবার্ধ মিলনই হলো সাহিত্য । আমরা সাহিত্যিকের যে-সৃষ্টি উপলব্ধি করি, রস আস্বাদন করি _ তা প্রকৃতপক্ষে ভাব ও রূপের অখন্ড এক সৃষ্টি । কোনোটিকেই আলাদা করে বিচার করা যায় না। দার্শনিক ক্রোচের মতে শিল্পের প্রথম প্রকাশ ঘটে, শিল্পীর মনোলোকে। আর এই প্রকাশ কল্পনার সাহায্যে বাইরের জগৎ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা বা প্রত্যয়সমূহের আকৃতি বা অবয়ব লাভ। ভাব ও রূপ এভাবেই হয়ে ওঠে অবিচ্ছেদ্য । কিন্তু আলোচনার সুবিধার জন্য আমরা ভাব ও রূপের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করি। ভাব ও রূপের অনিবার্য মিলনে যে আনন্দময় উপভোগের অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তাকেই বলা হয় রস। ভাবের মতো রূপ বা প্রকাশভঙ্গিও সাহিত্যের উপকরণ । মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত যে-কোনো বিষয় ভাব-রূপের উপাদান হতে পারে। এই ভাব বাস্তব জগতের সঙ্গে সাহিত্যিক বা শিল্পীর সংস্পর্শ থেকে সৃষ্টি হতে পারে, বা ইতিহাস, এতিহ্য ও পুরাণ থেকে আসতে পারে অথবা পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কল্পনায় উদিত হতে পারে। তাই ভাব বিচিত্র। কখনো চিন্তা, কখনো অনুভব, কখনো বা স্মৃতি হয়ে এই সব উপকরণ সাহিত্যিকের মনকে অধিকার করে । জগৎ ও জীবনের অভিজ্ঞতা সাহিত্যিকের মানসসম্পদ হলেও রূপের মাধ্যমেই তাকে প্রকাশ করতে হবে । একজন পাশ্চাত্য সমালোচক উইলিয়াম হেনরি হাডসন সাহিত্যের রূপরীতিকে অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাঁর মতে প্রতিটি সাহিত্য রূপের বিন্যাস, সামগ্তস্য, সৌন্দর্য এবং কার্যকারিতা নির্ধারিত নীতি বা আদর্শ অনুসারে সৃষ্টি করতে হবে । এই নীতির ভিত্তিতেই সাহিত্যের প্রযুক্তিগত কিংবা শৈলীগত উপাদান স্বীকৃতি লাভ করে।
এ-পরসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবেচনার শরণ নেয়া যেতে পারে। সাহিত্য, সাহিত্যের সামল্সী, সাহিত্যের তাৎপর্য প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের রূপ ও রসবৈচিত্র্ের প্রবণতাসমূহ শনাক্ত করেছেন। তাঁর মতে, সাহিত্যের প্রধান অবলম্বন জ্ঞানের বিষয় নয়, ভাবের বিষয়। আর এই ভাবজগৎ গড়ে ওঠে “মানব হৃদয়" *মানবচরিত্র' ও 'বহিঃপ্রকৃতি' কে আশ্রয় করে। বাইরের এসব উপাদান শিল্পীর মনে 'হৃদয়ভাব' জাত করে। কিন্তু এই হৃদয়ভাবের সার্থকতা প্রকাশের মধ্যে, অন্যের হৃদয়ে সঞ্চারিত করার মধ্যে । অন্যের হৃদয়ে সার করতে হলে তার রূপসৌন্দর্য ও কলাকৌশলে পরিপূর্ণতা থাকতে হবে । রবীন্দ্রনাথের মতে 'কলাকৌশলপূর্ণ' রচনা ভাবের দেহের মতো । এই দেহের মধ্যে ভাবের প্রতিষ্ঠায় সাহিত্যিকের পরিচয়।
পূর্ববর্তী পাঠে (পাঠ-১) আমরা সাহিত্যের যে-সব আঙ্গিকের কথা বলেছি, প্রত্যেকটি আঙ্গিককে সার্থক হতে হলে কলাকৌশলের অনিবার্য ব্যবহার থাকতে হবে। সাহিত্য-সৃষ্টি বলতে আমরা ভাব ও ভাবপ্রকাশের উপায় বা পদ্ধতি উভয়ই বুঝি । এই উপায়টি হচ্ছে রূপ, ভাব হচ্ছে রসের উতৎ্স। ভাবকে যথার্থ রূপে প্রকাশ করতে হলে প্রাসঙ্গিক রসেরও প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
সাহিত্যের রূপ বা প্রকাশভঙ্গির আলোচনা প্রসঙ্গে সাহিত্যের শৈলী বা Style-এর কথাও এসে পড়ে অনিবার্যভাবে। ভারতীয় অলঙ্কার শাস্ত্রে ইংরেজি স্টাইল-এর অনুরূপ যে-শব্দটি আদিকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সে শব্দটি হচ্ছে 'রীতি'। অলঙ্কার শাত্্বিদ আচার্য বামন বলেছেন, 'রীতি' হলো “পদরচনার বিশিষ্ট ভঙ্গি' এবং রীতিই হচ্ছে কাব্যের আত্মা __ রীতিরাত্া কাব্যস্য'। তাঁর মতে মাধুর্য, ওজঃ, প্রসাদ প্রভৃতি গুণে কাব্য বিশিষ্টতা পায়। কাব্যের আত্মা হলো রীতি আর রীতির আত্মা গুণ। আচার্য কুন্তক বলে আর এক ভারতীয় কাব্যতান্তিক রীতিকে কেবল সাজসজ্জা মনে করেননি। তাঁর মতে রীতি বা প্রকাশভঙ্গি একজন কবির আন্তর-স্বভাবকেই প্রকাশ করে।
পাশ্চাত্যের সাহিত্যভাবনায় স্টাইল-কে বিচিত্রভাবে দেখা হয়েছে। পেটো এবং তার অনুসারীরা ভাব ও রূপের পরম মিলনকেই স্টাইলের উত্স হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যে-ভাবটি কোনো স্টাইলের মধ্য দিয়ে “অনিবার্ষতা' পায়, সেটাই স্টাইলের সার্থকতা । দৃষ্টাতস্বরপ বলা যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্তের “বঙ্গভাষা' কবিতাটির ভাববস্তুর সঙ্গে তার স্টাইলের সম্পর্ক অনিবার্ষ। এ-কবিতার স্টাইল অন্যরকম হলে এর ভাব বা বিষয় পরিপূর্ণতা পেতো না। ত্যারিস্টটল ও তার অনুসারীদের মতে স্টাইল কোনো গুণ নয় __ অনেকগুলো উপাদানের ফল। এই ধারণা পরবর্তীকালে আরও বিচিত্র রূপে প্রকাশ পেয়েছে।
স্টাইলকে সাতটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে।
১. লেখকের নাম-অনুযায়ী স্টাইল। যেমন:
শেক্সপীয়রের স্টাইল
রবীন্দ্রনাথের স্টাইল
২. কালের দিক থেকে । যেমন:
মধ্যযুগীয় স্টাইল
আধুনিক স্টাইল
৩. ভাষার বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে । যেমন:
জার্মান স্টাইল
বঙ্গীয় স্টাইল
8. অঞ্চলভিত্তিক স্টাইল । যেমন:
শ্রীক স্টাইল
এশীয় স্টাইল
৫. জনসাধারণের রুচি অনুযায়ী। যেমন:
জনপ্রিয় স্টাইল
৬. বিষয় অনুযায়ী স্টাইল। যেমন:
বৈজ্ঞানিক স্টাইল
এঁতিহাসিক স্টাইল
নীতিমূলক স্টাইল
৭. উদ্দেশ্য অনুযায়ী স্টাইল। যেমন:
ভাবপ্রবন স্টাইল
ব্যঙ্গাতক স্টাইল
এভাবে স্টাইল বা প্রকাশভঙ্গি সাহিত্যবিচারের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। ক্লাসিক্যাল বা রোমান্টিক স্টাইলের ধারণানীতিও এ-জাতীয় মানসিকতা থেকে উদ্ভুত। যেমন হোমারের 'ইলিয়াড' ও মধুসূদন দত্তের 'মেঘনাদ-বধ কাব্য'-কে ক্লাসিক স্টাইলের কাব্য হিসেবে চিহিতি করা হয়। আবার জন কীটস্-এর 'এভিমিয়ন' কিংবা “হাইপেরিয়ন' এবং রবীন্দ্রনাথের “মানসী", “সোনার তরী", “বলাকা" কিংবা অন্যান্য কাব্যগুলো রোমান্টিক স্টাইলের দ্বভাবধর্ম লালন করে। ক্লাসিক স্টাইল বলতে বুঝি সুস্পষ্টতা (Objectivity) আর রোমান্টিক স্টাইল হলো ব্যক্তির ভাবময় (Subjective) জীবনানুভবের রূপায়ণ।
ভারতীয় কাব্যবিচারে রসবাদের মুল্য অপরিসীম । এই ধারণা কাব্যের শরীর বা রূপ অপেক্ষা রসকেই কাব্যের আত্মা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বুৎপত্তিগত দিক থেকে রস শব্দের অর্থ হলো আস্বাদন | কাব্যের বিষয়ব্ত অনুসারে পাঠকের মনে বিচিত্র ধরনের অনুভূতির জন্ম হয়। দৈনন্দিন জীবনে বস্তজগৎ থেকে আমরা যে রস আস্বাদন করি ___ তা বাহ্য ইন্দ্িয়ের রসনার ফল। সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে হবে অন্তরেব্দ্িয় মন দিয়ে ।
রসের উপাদান চারটি:
১. স্থায়িভাব
২. বিভাব
৩. অনুভাব
৪. সপ্চারীভাব
এই উপাদানগুলোর স্বরূপ ভালোভাবে বুঝলেই রসের প্রকাশ বা অভিব্যক্তি অনুধাবন করা সম্ভব। মানুষের বাসনালোকে সর্বদাই অসংখ্য ভাব গুঢ়ভাবে বর্তমান। আমাদের চিন্তজগতের এই সব ভাবের গতিবিধি বিচিত্র। এই ভাবগুলো একটি আরেকটি থেকে স্বতন্র। বিচারের সুবিধার জন্য অলঙ্কারশাস্ত্রবিদরা নয়টি ভাবকে স্বীকার করে নিয়েছেন। এগুলোর নাম__ রতি, হাস, শোক, ক্রোধ, উৎসাহ, ভয়, জুগুল্সা, বিস্ময় এবং শম। কাব্য বা সাহিত্য পাঠের ফলে বিষয়ের অনুধাবনসূত্রে একেকসময় একেকরূপ ভাবের সৃষ্টি হয়। এই ভাবগুলোর রস-পরিণাম নিম্নরূপঃ
রতিভাব__ শূঙ্গাররস
হাস-ভাব___ হাস্যরস
শোকভাব__ করুণরস
ক্রোধভাব__ রৌদ্ররস
উত্সাহভাব__ বীররস
জুগু্সাভাক__ বীভৎসরস
বিম্ময়ভাব__ অদ্ভুতরস
শমভাক__ শান্তরস
কেবল কাব্যপাঠের ফলে নয়, যে-কোন সাহিত্যরূপ পাঠের পরিণামে আমাদের চিত্তে একটা রসানুভূতির উদ্ভব হয়। 'বঙ্গভাষা' কবিতায় আত্মনিবেদনের যে শান্তযিদ্ধ রূপ পরিলক্ষিত হয়, তাকে শান্তরসের কবিতা বলাই যুক্তিযুক্ত রবীন্দ্রনাথের “বলাকা" কবিতায় একাধিক ভাবের মিশ্রণ আছে । কিন্তু মৌলভাব বিস্ময় এবং পরিণামে পাই অদ্ভুত রসের গভীর আস্বাদন। “অমর একুশে" কবিতায় ক্রোধ এবং উত্সাহ এই দুটি ভাবের স্পন্দন আমরা অনুভব করি। কোথাও কোথাও রৌদ্ররসের প্রকাশ ঘটলেও পরিণামে পেয়ে যাই বীররস।
উপরিউক্ত স্থায়িভাবকে যে-তিনটি উপাদান কার্যে পরিণত করে, সেগুলো হলো ___ বিভাব, অনুভাব এবং ব্যভিচারী বা সঞ্চারীভাব। বহির্জণতের বিষয়কে আমরা অনুভব করি বাইরের ইন্দ্রিয় দিয়ে। দুর্ঘটনা দেখলে আমরা শোকাভিভূত হই। সকালের সুন্দর সৃযেদিয়ের দৃশ্যে আনন্দিত হই, উদ্দাম মিছিলের আহ্বানে উত্সাহ বোধ করি ___ এগুলোরই রসপরিণাম করুণ, শান্ত কিংবা বীররস।
বিভাব দু প্রকারের:
ক) আলম্বন বিভাব : মুখ্যভাবে যে বস্তুকে অবলম্বন ( আলম্বন ) করে রস উৎপন্ন হয়, তাই আলম্বন বিভাব।
খ) উদ্দীপন বিভাব : যে বস্ত বা পারিপার্শিক অবস্থা রসকে উদ্দীপিত করে অর্থাৎ রস সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে __ তাই উদ্দীপন বিভাব। যেমন সুন্দর জোধা রাত, মিছিল প্রকম্পিত নগরী, দুর্ঘটনায় বিপর্যস্ত জনপদ, পুত্র শোকাতুরা জননীর হাহাকার ___ প্রভৃতি উদ্দীপন বিভাব।
বিচিত্র ভাবের প্রকাশরূপই হলো অনুভাব। যেমন ক্রুদ্ধ হলে আমাদের অভিব্যক্তির রূপ পালটে যায়। আবার বেদনার প্রতিক্রিয়া আমাদেরকে করে অশ্রুসজল, অর্থাৎ হৃদয়ের ভাব-বিকারের বহির্কাশই হলো অনুভাব।
ব্যভিচারী বা সঞ্চারীভাবের স্থায়ী কোনো স্বীকৃতি বা অস্তিত্ব নেই। কিন্তু বিভাব ও অনুভাবের সংমিশ্রণে রসের সৃষ্টি করে। যেমন আবেগ, স্বগ্ন, লজ্জা, গানি, বিষণ্নতা প্রভৃতি সংশিষ্ট স্থায়িভাবের স্পর্শে একটি রসপরিণামের সৃষ্টি করে। আবেগ থেকে বীররসও হতে পারে । আবার করুণ রসেরও জন্ম হতে পারে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, রসের ধারণাটি প্রাটীন। কিন্ত সাহিত্যের রূপের ধারণা পরিবর্তনশীল | কবিতাকে আদর্শ বা মডেল হিসেবে গ্রহণ করে রসশাস্বের জন্ম । এরপর সময়ের প্রয়োজনে অনেকগুলো সাহিত্যরূপের সৃষ্টি হয়েছে। উপন্যাস, নাটক, গল্প, প্রবন্ধ পাঠে আমাদের মধ্যে কোনো না কোনো রসবোধের সৃষ্টি হয়। রবীন্দ্রাথের 'একরাত্রি' গল্পে রসপরিণাম নিঃসন্দেহে করুণ, মুনীর চৌধুরীর “রক্তাক্ত প্রান্তরে'র রসপরিণতিও আমাদের মধ্যে করুণরসের ব্যপ্জনা সৃষ্টি করে। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের 'প্রাগৈতিহাসিকে'র রসপরিণাম বীভৎস রসের গভীরে নিক্ষেপ করে পাঠককে।
এভাবেই আমরা দেখবো, সাহিত্যের রূপ ও রস পরস্পর অবিচ্ছিনন। এ-দুয়ের যথার্থ মিলনেই সাহিত্যের সার্থকতা ।
বন্তসংক্ষেপ
ভাব হল সাহিত্যের প্রধান অবলম্বন। ভাবজগৎ গড়ে ওঠে মানবহৃদয়, মানবচরিত্র ও বহিঃপ্রকৃতিকে আশ্রয় করে। বাইরের এসব উপাদান শিল্পীদের মনে হদয়ভাব জাগ্রত করে । কিন্তু এই হৃদয়ভাবের সার্থকতা নির্ভর করে অন্যের হৃদয়ে তা সঞ্চারিত করার মাধ্যমে । অন্যের হৃদয়ে সঞ্চার করতে হলে তার রূপসৌন্দর্য ও কলাকৌশলে পরিপূর্ণতা থাকতে হয়। একাধিক সাহিত্যরূপের সৃষ্টি লক্ষণীয়। উপন্যাস, নাটক, গল্প, প্রবন্ধ পাঠে আমাদের মধ্যে কোন না কোন রসবোধের সৃষ্টি হয়। রসের ধারণাটি প্রাটীন। সাহিত্যের রূপ ও রস পরস্পর অবিচ্ছিন। এ দুয়ের যথার্থ মিলনেই সাহিত্যের সার্থকতা ।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন
সংক্ষিপ্ত উত্তরমূলক প্রশ্ন
১. সাহিত্যের রূপ বলতে আমরা কি বুঝি?
২. সাহিত্যের স্টাইল বা প্রকাশভঙ্গি কাকে বলে?
৩. সাহিত্যের রূপ ও রস কেন অবিচ্ছেদ্য?
৪. বর্তমানকালে সাহিত্যে রসবিচারের উপযোগিতা কি?
রচনামুূলক প্রশ্ন
১. সাহিত্যের রূপ ও রস বলতে কি বোঝেন? রসের উপাদান সম্পর্কে যা জানেন লিখুন।
৪ নং সংক্ষিপ্ত-উত্তরমূলক প্রশ্নের নমুনা-উত্তর:
রসশন্ত্ প্রাচীন ভারতীয় আলংকারিকদের সৃষ্টি । সময়ের বিবর্তনে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো আমাদেরকে বিচিত্র ভাবে প্রভাবিত করেছে। কিন্ত প্রাচীন গ্রীক কাব্যতত্বে আমরা বিষয় অনুসারে কাব্য কিংবা নাটকের বিভিন্ন রসপরিণতি সম্পর্কে জানতে পারি । যেমন গ্রীক ট্র্যাজেডিগুলোর রসপরিণাম করুণ। মানুষের জীবন-ধরনের পরিবর্তন হলেও মৌলিক স্থায়ীভাবশুলো এখনো ক্রিয়াশীল প্রকাশরীতির প্রভূত পরিবর্তন হলেও সাহিত্য পাঠের পর আমাদের মধ্যে কোনো না কোন রসাবেদনের সৃষ্টি হয়। এবং এই রসাবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সব সাহিত্য পাঠকের মনে স্থায়ী আসন লাভ করে । সুতরাং সাহিত্য যতদিন থাকবে রসও ততকাল থাকবে।
0 Comments