Latest courses

মাসি পিসি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

 

মাসি পিসি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়


লেখক-পরিচিতি - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিহারের সওতাল পরগনার দুমকায় ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯এ মে জন্মগ্রহণ করেন । তার পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতার নাম হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতার নাম নীরদাসুন্দরী দেবী। তার পিতৃপ্রদত্ত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় । ডাকনাম মানিক। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন। মাত্র আটচল্লিশ বছর তিনি বেঁচেছিলেন। কলকাতার প্রেসিডেলসি কলেজে বিএসসি পড়ার সময়ে মাত্র বিশ বছর বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে তিনি প্রথম গল্প “অতসীমামী” লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। তারপর জীবনের বাকি আটাশ বছর নিরবচ্ছিননভাবে লিখে গেছেন । মাঝে বছর তিনেক মাত্র তিনি চাকরি ও ব্যবসায়িক কাজে নিজেকে জড়ালেও বাকি পুরো সময়টাই তিনি সার্বক্ষণিকভাবে সাহিত্যসেবায় নিয়োজিত ছিলেন । উপন্যাস ও ছোটগল্প লেখক হিসেবে মানিক বাংলা সাহিত্যে খ্যাতিমান। অল্প সময়েই প্রচুর গল্প-উপন্যাস সৃষ্টি করেন। সেই সঙ্গে লিখেছেন কিছু কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ ও ডায়েরি । বিজ্ঞানমনস্ক এই লেখক মানুষের মনোজগৎ তথা অন্তীবনের রূপকার হিসেবে সার্থকতা দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে সমাজবাস্তবতার শিল্পী হিসেবেও স্বাক্ষর উপন্যাস। তার বিখ্যাত ছোটগল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : 'প্রাগৈতিহাসিক', “সরীসৃপ", “সমুদ্রের স্বাদ", “কুষ্ঠরোগীর কলকাতায় ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের তেসরা ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


শেষবেলায় খালে এখন পুরো ভাটা । জল নেমে গিয়ে কাদা আর ভাঙা ইটপাটকেল ও ওজনে ভারি আবর্জনা বেরিয়ে পড়েছে। কংক্রিটের পুলের কাছে খালের ধারে লাগানো সালতি থেকে খড় তোলা হচ্ছে পাড়ে। পাশাপাশি জোড়া লাগানো দুটো বড় সালতি বোঝাই আঁটিবীধা খড় তিনজনের মাথায় চড়ে গিয়ে জমা হচ্ছে ওপরের মস্ত গাদায়। ওঠানামার পথে ওরা খড় ফেলে নিয়েছে কাদায় । সালতি থেকে ওদের মাথায় খড় তুলে দিচ্ছে দুজন। একজনের বয়স হয়েছে, আধপাকা চুল, রোগা শরীর। অন্যজন মাঝবয়সী, বেঁটে, জোয়ান, মাথায় ঠাসা কদমছাটা রুক্ষ চুল।

পুলের তলা দিয়ে ভাটার টান ঠেলে এগিয়ে এল সরু লম্বা আরেকটা সালতি, দু-হাত চওড়া হয়নি না হয়। দু-মাথায় দীড়িয়ে দুজন তঢ়া বিধবা লগি ঠেলছে, ময়লা মোটা থানের আঁচল দুজনেরই কোমরে বীধা। মাঝখানে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে অল্পবয়সী একটি বৌ। গায়ে জামা আছে, নকশা পাড়ের সন্তা সাদা শাড়ি। আটসীট থমথমে গড়ন, গোলগাল মুখ । কৈলাশ বাহকের মাথায় খড় চাপাতে ব্যস্ত ছিল। চটপট শেষ আটিটা চাপিয়ে দিয়ে সে যখন ফিরল, 

মাসি-পিসির সালতি দু-হাতের মধ্যে এসে গেছে। 

“ও মাসি, ওগো পিসি, রাখো রাখো । খপর আছে শুনে যাও |”

সামনে থেকে মাসি বলে বিরক্তির সঙ্গে, “বেলা আর নেই কৈলেশ।” 

পেছনে থেকে পিসি বলে, “অনেকটা পথ যেতে হবে কৈলেশ।”

মাসি-পিসির গলা ঝরঝরে, আওয়াজ একটু মোটা, একটু ঝংকার আছে। কৈলাশের খবরটা গোপন, দুজনে লম্বা লম্বা সালতির দু-মাথায় থাকলে সম্ভব নয় চুপে চুপে বলা । মাসি বড় সালতির খড় ঠেকানো বাশটা চেপে ধরে থাকে, পিসি লগি হাতে নিয়েই পিছন থেকে এগিয়ে আসে সামনের দিকে । আহ্াদি যেখানে ছিল সেখানে বসেই কান পেতে রাখে । কথাবার্তা সে সব শুনতে পায় সহজেই । কারণ, সে যাতে শুনতে পায় এমনি করেই বলে কৈলাশ। 

“বলি মাসি, তোমাকেও বলি পিসি”, কৈলাশ শুরু করে, “মেয়াকে একদম শ্বশুরঘর পাঠাবে না মনে করেছ যদি, সে কেমন ধারা কথা হয়? এত বড় সোমন্ত মেয়া, তোমরা দুটি মেয়েলোক বাদে ঘরে একটা পুরুষমানুষ নেই, বিপদ-আপদ ঘটে যদি তো-”

মাসি বলে, “খুনসুটি রাখো দিকি কৈলেশ তোমার, মোদ্দাকথাটা কী তাই কও, বললে না যে খপর আছে, কী?”

পিসি বলে, “খপরটা কী তাই কও । বেলা বেশি নেই কৈলেশ।”

মাসি-পিসির সাথে পারা যাবে না জানে কৈলাশ । অগত্যা ফেনিয়ে রসিয়ে বলবার বদলে সে সোজা কথায় আসে, “জগুর সাথে দেখা হলো কাল। খড় তুলে দিতে সাঝ হয়ে গেল, তা দোকানে এটটু-মানে আর কি চা খেতে গেছি চায়ের দোকানে, জণ্ুর সাথে দেখা ।”

মাসি বলে, “চায়ের দোকান না কিসের দোকান তা বুঝিছি কৈলেশ, তা কথাটা কী?”

পিসি বলে, “সেথা ছাড়া আর ওকে কোথা দেখবে । হাতে দুটো পয়সা এলে তোমারও স্বভাব বিগড়ে যায় কৈলেশ। তা, কী বললে জণ্ড?”

কৈলাশ ফীপরে পড়ে আড়চোখে চায় আহ্াদির দিকে, হঠাৎ বেমক্কা জোরের সঙ্গে প্রতিবাদ করে যে, তা নয়, “ওসব একরকম ছেড়ে দিয়েছে জণ্ড। লোকটা কেমন বদলে গেছে মাসি, সত্যি কথা পিসি, জণ্ড আর সেই জগ্ড নেই । বৌকে নিতে চায় এখন। তোমরা নাকি পণ করেছ মেয়া পাঠাবে না, তাতেই চটে আছে। সম্মান তো আছে একটা মানুষের, কবার নিতে এল তা মেয়া দিলে না, তাই তো নিতে আসে না আর । আমি বলি কী, নিজেরা যেচে এবার পাঠিয়ে দেও মেয়াকে।”

মাসি বলে, “পেট শুকিয়ে লাথি ঝাটা খেতে? কলকেপোড়া ছ্যাকা খেতে? খুঁটির সাথে দড়িবাধা হয়ে থাকতে দিনভর রাতভর?”

পিসি-বলে, “মেয়া না পাঠাই, জামাই এলে রাখিনি জামাই-আদরে তাকে? ছাগলটা বেচে দিয়ে খাওয়াইনি ভালোমন্দ দশটা জিনিস?”

মাসি বলে, “ফের আসুক, আদরে রাখব যদ্দিন থাকে । বজ্জাত হোক, খুনে হোক, জামাই তো। ঘরে এলে খাতির না করব কেন? তবে মেয়া মোরা পাঠাব না।” 

পিসি বলে, “নে কৈলেশ, মরতে মোরা মেয়াকে পাঠাব না।”

বুড়ো রহমান একা খড় চাপিয়ে যায় বাহকদের মাথায়, চুপচাপ শুনে যায় এদের কথা । ছলছল চোখে একবার তাকায় আহ্াদির দিকে । তার মেয়েটা শ্বশুরবাড়িতে মরেছে অল্পদিন আগে । কিছুতে যেতে চায়নি মেয়েটা, দাপাদাপি করে কেঁদেছে যাওয়া ঠেকাতে, ছোট অবুঝ মেয়ে । তার ভালোর জন্যেই তাকে জোর-জবরদস্তি করে পাঠিয়ে দিয়েছিল । আহ্রাদির সঙ্গে তার চেহারায় কোনো মিল নাই। বয়সে সে ছিল অনেক ছোট, চেহারা ছিল অনেক বেশি রোগা । তবু আহ্রাদির ফ্যাকাশে মুখে তারই মুখের ছাপ রহমান দেখতে পায়, খড়ের আঁটি তুলে দেবার ফাকে ফাকে যখনই সে তাকায় আহ্বাদির দিকে।

কৈলাশ বলে, “তবে আসল কথাটা বলি। জণ্ড মোকে বললে, এবার সে মামলা করবে বৌ নেবার জন্য । তার বিয়ে করা বৌকে তোমরা আটকে রেখেছ বদ মতলবে । মামলা করলে বিপদে পড়বে । সোয়ামি নিতে চাইলে বৌকে আটকে রাখার আইন নেই। জেল হয়ে যাবে তোমাদের । আর যেমন বুঝলাম, মামলা জণ্ড করবেই আজকালের মধ্যে । মরবে তোমরা জান মাসি, জান পিসি, মারা পড়বে তোমরা একেবারে ।” 

আন্রাদি একটা শব্দ করে, অস্ফুট আর্তনাদের মতো । মাসি ও পিসি মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে কয়েক বার । মনে হয়, মনে তাদের একই কথা উদয় হয়েছে, চোখে চোখে চেয়ে সেটা শুধু জানাজানি করে নিল তারা । 

মাসি বলল, “জেলে নয় গেলাম কৈলেশ, কিন্তু মেয়া যদি সোয়ামির কাছে না যেতে চায় খুন হবার ভয়ে?”

বলে মাসি বড় সালতির খড় ঠেকানো বাশ ছেড়ে দিয়ে লগি গুঁজে দেয় কাদায়, পিসি তরতর করে পিছনে গিয়ে লগি কাদায় গুঁজে হেলে পড়ে, শরীরের ভারে সরু লম্বা সালতিটাকে এগিয়ে দেয় ভাটার টানের বিপক্ষে । বেলা একরকম নেই। ছায়া নামছে চারদিকে ।

শকুনরা উড়ে এসে বসছে পাতাশূন্য শুকনো গাছটায়। একটা শকুন উড়ে গেল এ আশ্রয় ছেড়ে অল্প দূরে আরেকটা গাছের দিকে । ডাল ছেড়ে উড়তে আর নতুন ডালে গিয়ে বসতে কী তার পাখা ঝাপটানি!

মায়ের বোন মাসি আর বাপের বোন পিসি ছাড়া বাপের ঘরের কেউ নেই আহ্রাদির। দুর্ভিক্ষ কোনোমতে ঠেকিয়েছিল তার বাপ। মহামারীর একটা রোগে, কলেরায়, সে, তার বৌ আর ছেলেটা শেষ হয়ে গেল। মাসি-পিসি তার আশ্রয়ে মাথা গুঁজে আছে অনেক দিন, দূর ছাই সয়ে আর কুড়িয়ে পেতে খেয়ে নিরাশ্রয় বিধবারা যেমন থাকে । নিজেদের শাকপাতা ফলমূল ডাটা কুড়িয়ে, এটা ওটা জোগাড় করে । শাকপাতা খুদকুঁড়ো ভোজন, বছরে দুজোড়া থান পরন- খরচ তো এই। বছরের পর বছর ধরে কিছু পুঁজি পর্যন্ত হয়েছিল দুজনের, রূপোর টাকা আধুলি সিকি। দুর্ভিক্ষের সময়টা বাচবার জন্য তাদের লড়তে হয়েছে সাংঘাতিকভাবে, আহাদির বাপ তাদের থাকাটা শুধু বরাদ্দ রেখে খাওয়া ছাটাই করে দিয়েছিল একেবারে পুরোপুরি । তারও তখন বিষম অবস্থা । নিজেরা বাচে কি বাঁচে না, তার ওপর জগুর লাথির চোটে মরমর মেয়ে এসে হাজির সে কোনদিক সামলাবে? মাসি-পিসির সেবা-যত্রেই আহ্রাদি অবশ্য সেবার বেঁচে গিয়েছিল, তার বাপ-মাও সেটা স্বীকার করেছে। কিন্তু কী করবে, গলা কেটে রক্ত দিয়ে সে ধার শোধ করা যদি-বা সম্ভব, অন্ন দেওয়ার ক্ষমতা কোথায় পাবে। পাল্লা দিয়ে মাসি-পিসি আহ্াদির জীবনের জন্য লড়েছিল, পেল যদি তো খেয়ে, না-পেল যদি তো না-খেয়েই। অবস্থা যখন তাদের অতি কাহিল, চারদিকে না-খেয়ে মরা শুরু করেছে মানুষ, মরণ ঠেকাতেই ফুরিয়ে আসছে তাদের জীবনীশক্তি; একদিন মাসি বলে পিসিকে, “একটা কাজ করবি বেয়াইন? তাতেও তোরও দুটো পয়সা আসে, মোরও দুটো পয়সা আসে ।”

শহরের বাজারে তরিতরকারি ফলমূলের দাম চড়া । গা থেকে কিনে যদি বাজারে গিয়ে বেচে আসে তারা, কিছু রোজগার হবে। একা মাসির ভরসা হয় না সালতি বেয়ে অতদূর যেতে, যাওয়া-আসাও একার দ্বারা হবে না তার । পিসি রাজি হয়েছিল৷ এতে কিছু হবে কি না হবে ভগবান জানে, কিন্তু যদি হয় তবে রোজগারের একটা নতুন উপায় মাসি পেয়ে যাবে আর সে পাবে না, তাকে না পেলে অন্য কারো সাথে হয়ত মাসি বন্দোবস্ত করবে, তা কি পারে পিসি ঘটতে দিতে ।

সেই থেকে শুরু হয় গেরস্তের বাড়তি শাকসবজি ফলমূল নিয়ে মাসি-পিসির সালতি বেয়ে শহরের বাজারে গিয়ে বেচে আসা । গায়ের বাবু বাসিন্দারাও নগদ পয়সার জন্য বাগানের জিনিস বেচতে দেয়। মাসি-পিসির ভাব ছিল আগেও । অবস্থা এক, বয়স সমান, একঘরে বাস, পরস্পরের কাছে ছাড়া সুখ-দুঃখের কথা তারা কাকেই-বা বলবে, কেই-বা শুনবে । তবে হিংসা দ্বেষ রেষারেষিও ছিল যথেষ্ট, কোন্দলও বেধে যেত কারণে অকারণে ।

পিসি এ বাড়ির মেয়ে, এ তার বাপের বাড়ি । মাসি উড়ে এসে জুড়ে বসেছে এখানে । তাই মাসির উপর পিসির একটা অবজ্ঞা অবহেলার ভাব ছিল। এই নিয়ে পিসির অহংকার আর খোচাই সবচেয়ে অসহ্য লাগত মাসির । ধীর শান্ত দুঃখী মানুষ মনে হতো এমনি তাদের, কিন্তু ঝগড়া বাধলে অবাক হয়ে যেতে হতো তাদের দেখে । সে কী রাগ, সে কী তেজ, সে কী গো! মনে হতো এই বুঝি কামড়ে দেয় একে অপরকে, এই বুঝি কাটে বটি দিয়ে। 

শাকসবজি বেচে বাচবার চেষ্টায় একসঙ্গে কোমর বেঁধে নেমে পড়ামাত্র সব বিরোধ সব পার্থক্য উড়ে গিয়ে দুজনের হয়ে গেল একমন, একপ্রাণ। সে মিল জমজমাট হয়ে উঠল আহ্রাদির ভার ঘাড়ে পড়ায়। নিজের পেট ভরানো শুধু নয়, নিজেদের বেঁচে থাকা শুধু নয়, তাদের দুজনেরই এখন আহ্রাদি আছে। খাইয়ে পরিয়ে যত্বে রাখতে হবে তাকে, শ্বশুরঘরের কবল থেকে বাচাতে হবে তাকে, গায়ের বজ্জাতদের নজর থেকে সামলে রাখতে হবে, কত দায়িত্ব তাদের, কত কাজ, কত ভাবনা । 

বাপ মা বেঁচে থাকলে আত্রাদিকে হয়ত শ্বশুরবাড়ি যেতে হতো, মাসি-পিসিও বিশেষ কিছু বলতো কি না সন্দেহ। কিন্তু তারা তো নেই, এখন মাসি-পিসিরই সব দায়িতৃ । বিনা পরামর্শে আপনা থেকেই তাদের ঠিক হয়েছিল, আন্াদিকে পাঠানো হবে না। আহ্াদিকে কোথাও পাঠানোর কথা তারা ভাবতেও পারে না। বিশেষ করে ওই খুনেদের কাছে কখনো মেয়ে তারা পাঠাতে পারে, যাবার কথা ভাবলেই মেয়ে যখন আতঙ্কে পীশুটে মেরে যায়?

বাপের ঘরদুয়ার জমিজমাটুকু আহ্রাদিকে বর্তেছে, জণ্তর বৌ নেবার আগ্হও খুবই স্পষ্ট । সামান্যই ছিল তার বাপের, তারও সিকিমতো আছে মোটে, বাকি গেছে গোকুলের কবলে । তবু মুফতে যা পাওয়া যায় তাতেই জণ্তর প্রবল লোভ।

খালি ঘরে আহ্রাদিকে রেখে কোথাও যাবার সাহস তাদের হয় না। দুজনে মিলে যদি যেতে হয় কোথাও আত্রাদিকে তারা সঙ্গে নিয়ে যায়।

মাসি বলে, “ডরাস্নি আহাদি। ভাওতা দিয়ে আমাদের দমাবার ফিকির সব । নয় তো কৈলেশকে দিয়ে ওসব কথা বলায় মোদের? 

পিসি বলে, “দুদিন বাদে ফের আসবে দেখিস জামাই । তখন শুধোলে বলবে, কই না, আমি তো ওসব কিছু বলি নি কৈলেশকে।" 

মাসি বলে, “চার মাসে পড়লি, আর কটা দিন বা। মা-মাসির কাছেই রইতে হয় এ সময়টা, জামাই এলে বুঝিয়ে বলব ।” পিসি বলে, “ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়, জানিস আত্রাদি। তোর পিসে ছিল জগ্ুর মতো । খোকাটা কোলে আসতে কী হয়ে গেল সেই মানুষ । চুপি চুপি এসে এটা ওটা খাওয়ায়, উঠতে বলি তো ওঠে, বসতে বলি তো বসে'।


মাসি বলে, “তোর মেসো ঠিক ছিল, শাউড়ি ননদ ছিল বাঘ । উঠতে বসতে কী ছ্যাচা খেয়েছি ভাবলে বুক কীপে। কিন্তু জানিস আহাদি, মেয়েটা যেই কোলে এল শাউড়ি ননদ যেন মোকে মাথায় করে রাখলে বাঁচে ।”

পিসি বলে, “তুইও যাবি, সোয়ামির ঘর করবি । ডরাস্নি, ডর কিসের?"

বাড়ি ফিরে দীপ জেলে মাসি-পিসি রান্নাবান্না সারতে লেগে যায় । বাইরে দিন কাটলেও আত্রাদির পরিশ্রম কিছু হয়নি, শুয়ে বসেই দিন কেটেছে। তবু মাসি-পিসির কথায় সে একটু শোয়। শরীর নয়, মনটা তার কেমন করছে। নিজেকে তার ছ্যাচড়া, নোতরা, নর্দমার মতো লাগে । মাসি-পিসির আড়ালে থেকেও সে টের পায় কীভাবে মানুষের পর মানুষ তাকাচ্ছে তার দিকে, কতজন কতভাবে মাসি-পিসির সঙ্গে আলাপ জমাচ্ছে তরিতরকারির মতো তাকেও কেনা যায় কি না যাচাই করবার জন্য । গায়েরও কতজন তার কত রকমের দর দিয়েছে মাসি-পিসির কাছে। মাসি-পিসিকে চিনে তারা অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে আজকাল, কিন্ত গোকুল হাল ছাড়েনি। মাসি-পিসিকে পাগল করে তুলেছে গোকুল। মায়ের বাড়া তার এই মাসি-পিসি, কী দুর্ভোগ তাদের তার জন্য। মাসি-পিসিকে এত যন্ত্রণা দেওয়ার চেয়ে সে নয় শ্বশুরঘরের লাঞ্ছনা সইত, জণ্তর লাথি খেত। ঈষৎ তন্দ্রার ঘোরে শিউরে ওঠে আহাদি। একপাশে মাসি আর একপাশে পিসিকে না নিয়ে শুলে কি চলবে তার কোনোদিন?

রান্না সেরে খাওয়ার আয়োজন করছে মাসি-পিসি, একেবারে ভাতটাত বেড়ে আহাদিকে ডাকবে । ভাগাভাগি কাজ তাদের এমন সহজ হয়ে গেছে যে বলাবলির দরকার তাদের হয় না, দুজনে মিলে কাজ করে যেন একজনে করছে। এবার ব্যঞ্জনে নুন দেবে এ কথা বলতে হয় না পিসিকে, ঠিক সময়ে নুনের পাত্র সে এগিয়ে দেয় মাসির কাছে। একটি কড়া কথা তাকে বলা হবে না, এতটুকু খোচা দেওয়া হবে না। উপদেশ দিতে গেলে চটবে জামাই, পুরুষমানুষ তো যতই হোক, এটা করা তার উচিত নয়, এসব কিছু বলা হবে না তাকে । জামাই এসেছে তাই আনন্দ রাখবার যেন ঠাই নেই এই ভাব দেখাবে মাসি-পিসি- আহাদিকে শিখিয়ে দিতে হবে সোয়ামি এসেছে বলে যেন আহ্াদে গদগদ হবার ভাব দেখায় । যে কদিন থাকে জামাই, সে যেন অনুভব করে, সে-ই এখানকার কর্তা, সে-ই সর্বেসর্বা। 

বাইরে থেকে হাক আসে কানাই চৌকিদারের । মাসি-পিসি পরস্পরের মুখের দিকে তাকায়, জোরে নিঃশ্বাস পড়ে দুজনের । সারাটা দিন গেছে লড়ে আর লড়ে । সরকারবাবুর সঙ্গে বাজারের তোলা নিয়ে ঝগড়া করতে অর্ধেক জীবন বেরিয়ে গেছে দু-জনের | এখন এল চৌকিদার কানাই । হা্গামা না আসে রাব্রে, গায়ে লোক যখন ঘুমোচ্ছে। রসুই চালায় ঝাপ এঁটে মাসি-পিসি বাইরে যায় । শুর্রপক্ষের একাদশীর উপোস করেছে তারা দুজনে গতকাল । আজ দ্বাদশী, জ্যোৎস্না বেশ উজ্জীল। কানাইয়ের সাথে গোকুলের যে তিনজন পেয়াদা এসেছে তাদের মাসি-পিসি চিনতে পারে, মাথায় লাল পাগড়ি-আঁটা লোকটা তাদের অচেনা । 

কানাই বলে, “কাছারিবাড়ি যেতে হবে একবার ।”

মাসি বলে, “এত রাতে?

পিসি বলে, “মরণ নেই?

কানাই বলে, 'দারোগাবাবু এসে বসে আছেন বাবুর সাথে । যেতে একবার হবেগো দিদিঠাকরুনরা । বেঁধে নিয়ে যাবার হুকুম আছে ।”

মাসি-পিসি মুখে মুখে তাকায় । পথের পাশে ডোবার ধারে কীঠাল গাছের ছায়ায় তিন-চারজন ঘুপটি মেরে আছে স্পষ্টই দেখতে পেয়েছে মাসি-পিসি। ওরা যে গাঁয়ের গুন্ডা সাধু বৈদ্য ওসমানেরা তাতে সন্দেহ নেই, বৈদ্যের ফেটি-বীধা বাবরি চুলওয়ালা মাথাটায় পাতার ফাকে জ্যোত্ত্লা পড়েছে। তারা যাবে কাছারিতে কানাই আর পেয়াদা কনস্টেবলের সঙ্গে । ওরা এসে আহ্রাদিকে নিয়ে যাবে।

মাসি বলে, 'মোদের একজন গেলে হবে না কানাই?”

পিসি বলে, “আমি যাই চলো?"

কর্তা ডেকেছেন দুজনকে ।

মাসি-পিসি দুজনেই আবার তাকায় মুখে মুখে ।

মাসি বলে, “কাপড়টা ছেড়ে আসি কানাই ।"

পিসি বলে, “হাত ধুয়ে আসি, একদও লাগবে না।"

তাড়াতাড়িই ফিরে আসে তারা । মাসি নিয়ে আসে বটিটা হাতে করে, পিসির হাতে দেখা যায় রামদার মতো মস্তএকটা কাটারি।

মাসি বলে, “কানাই, কত্তাকে বোলো, মেয়েনোকের এত রাতে কাছারিবাড়ি যেতে নজ্জা করে । কাল সকালে যাব" পিসি বলে, “এত রাতে মেয়েনোককে কাছারিবাড়ি ডাকতে কত্তার নজ্জা করে না কানাই?'

কানাই ফুঁসে ওঠে, “না যদি যাও ঠাকরুনরা ভালোয় ভালোয়, ধরে বেঁধে টেনেহিচড়ে নিয়ে যাবার হুকুম আছে কিন্তু বলে রাখলাম ॥

মাসি বঁটিটা বাগিয়ে ধরে দাতে দাত কামড়ে বলে, “বটে? ধরে বেঁধে টেনেহিচড়ে নিয়ে যাবে? এসো । কে এগিয়ে আসবে এসো । বঁটির এক কোপে গলা ফীক করে দেব ।" 

পিসি বলে, “আয় না বজ্জাত হারামজাদারা, এগিয়ে আয় না? কাটারির কোপে গলা কাটি দু-একটার ।” দু-পা এগোয় তারা দ্বিধাভরে । মাসি-পিসির মধ্যে ভয়ের লেশটুকু না দেখে সত্যিই তারা খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছে। মারাত্মক ভঙ্গিতে বঁটি আর দা উঁচু হয় মাসি-পিসির।

মাসি বলে, 'শোনো কানাই, এ কিন্তু এর্কি নয় মোটে । তোমাদের সাথে মোরা মেয়েনোক পারব না জানি কিন্তু দুটো-একটাকে মারব জখম করব ঠিক ।”

পিসি বলে, “মোরা নয় মরব |”

তারপর বিনা পরামর্শেই মাসি-পিসি হঠাৎ গলা ছেড়ে দেয় প্রথমে শুরু করে মাসি, তারপর যোগ দেয় পিসি। আশপাশে যত বাসিন্দা আছে সকলের নাম ধরে গলা ফাটিয়ে তারা হাক দেয়, ও বাবাঠাকুর! ও ঘোষ মশায়! 

ও জনাদ্দন! ওগো কানুর মা! বিপিন! বংশী ...

কানাই অদৃশ্য হয়ে যায় দলবল নিয়ে । হাকাহাকি ডাকাডাকি শুরু হয়ে যায় পাড়ায়, অনেকে ছুটে আসে, কেউ কেউ ব্যাপার অনুমান করে ঘরের জানালা দিয়ে উকি দেয় বাইরে না বেরিয়ে ।

এই হট্টগোলের পর আরও নিঝুম আরও থমথমে মনে হয় রাত্রিটা। আহ্রাদিকে মাঝখানে নিয়ে শুয়ে ঘুম আসে না মাসি-পিসির চোখে । বিপদে পড়ে হাক দিলে পাড়ার এত লোক ছুটে আসে, এমনভাবে প্রাণ খুলে এতখানি জালার সঙ্গে নিজেদের মধ্যে খোলাখুলিভাবে গোকুল আর দারোগা ব্যাটার চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করতে সাহস পায়, জানা ছিল না মাসি-পিসির ৷ তারা হাকডাক শুরু করেছিল খানিকটা কানাইদের ভড়কে দেবার জন্যে, এত লোক এসে পড়বে আশা করেনি । তাদের জন্য যতটা নয়, গোকুল আর দারোগার ওপর রাগের জ্বীলাই যেন ওদের ঘর থেকে টেনে বার করে এনেছে মনে হলো সকলের কথাবার্তা শুনে। কেমন একটা স্বস্তি বোধ করে মাসি-পিসি। বুকে নতুন জোর পায়।

মাসি বলে, “জানো বেয়াইন, ওরা ফের ঘুরে আসবে মন বলছে। এত সহজে ছাড়বে কি।

পিসি বলে, “তাই ভাবছিলাম। মেয়েটাকে কুটুমবাড়ি সরিয়ে দেওয়ায় সোনাদের ঘরে মাঝরাতে আগুন ধরিয়েছিল সেবার ।"

খানিক চুপচাপ ভাবে দুজনে ।

মাসি বলে, “সজাগ রইতে হবে রাতটা ।"

পিসি বলে, “তাই ভালো । কীথা কম্বলটা চুবিয়ে রাখি জলে, কী জানি কী হয়।”

আস্তে চুপি চুপি তারা কথা কয়, আহাদির ঘুম না ভাঙে। অতি সন্তর্পণে তারা বিছানা ছেড়ে ওঠে । আহাদির বাপের আমলের গোরুটা নেই, গামলাটা আছে। ঘড়া থেকে জল ঢেলে মোটা কাথা আর পুরনো ছেড়া একটা কম্ষল চুবিয়ে রাখে, চালায় আগুন ধরে উঠতে উঠতে গোড়ায় চাপা দিয়ে নেভানো যাতে সহজ হয়। ঘড়ায় আর হাড়ি কলসিতে আরও জল এনে রাখে তারা ডোবা থেকে । বটি আর দা রাখে হাতের কাছেই। যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি। /সংক্ষেপিতা


শব্দার্থ ও টীকা


সালতি _. শালকাঠ নির্মিত বা তালকাঠের সরু ডোঙা বা নৌকা ।

কদমছাট _. মাথার চুল এমনভাবে ছাটা যে তা কদমফুলের আকার ধারণ করে।

লগি -. হাত ছয়েক লম্বা সরু বাশ । নৌকা চালানোর জন্য ব্যবহৃত বাশের দণ্ড।

খপর _ খিবর" শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ ।

মেয়া _. “মেয়ে' শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ ।

সোমত্ত _. সমর্থ (সংসারধর্ম পালনে), যৌবনপ্রাপ্ত।

খুনসুটি _. হাসি-তামাশাযুক্ত বিবাদ-বিসম্বাদ বা ঝগড়া ।

বেমক্কা _. স্থান-বহির্ভত। অসংগত |

পেটে শুকিয়ে লাথি ঝাঁটা _ পর্যাপ্ত খাবার না-জুগিয়ে কষ্ট দেওয়ার পাশাপাশি লাথি বাটার মাধ্যমে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা ।

কলকেপোড়া ছ্যাকা _. তামাকসেবনে ব্যবহৃত হুকার উপরে কলকেতে যে আগুন থাকে তা দিয়ে দগ্ধ করা।

ডালের বড়ি _. চালকুমড়া ও ডাল পিষে ছোট ছোট আকারে তৈরি করা খাদ্যস্ত যা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয় এবং সবজি-মাছ-মাংসের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া হয়।

পাঁশুটে _ ছাইবর্ণবিশিষ্ট | পাংশুবর্ণ। পার্ডুর। ফ্যাকাশে ।

ব্যঞ্জন _. রান্না-করা তরকারি ।

বাজারের তোলা _ বাজারে বিক্রেতাদের কাছ থেকে আদায়করা খাজনা ।

রসুই চালা _ যে চালার নিচে রান্না করা হয়। রান্নাঘর ।

কাটারি _.. কাটবার অস্ত্র

এর্কি _. হয়ার্কি' শব্দের আঞ্চলিক উচ্চারণ । হাস্য-পরিহাস বা রসিকতা ।


পাঠ-পরিচিতি - “মাসি-পিসি" গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় কলকাতার 'পূর্বাশা' পত্রিকায় ১৩৫২ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায় (মার্চ এপ্রিল ১৯৪৬)। পরে এটি সংকলিত হয় “পরিস্থিতি” (অক্টোবর ১৯৪৬) নামক গল্পগ্রন্থে। বর্তমান পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে “এতিহ্য' প্রকাশিত মানিক-রচনাবলি পঞ্চম খণ্ড থেকে। স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃমাতৃহীন এক তরুণীর করুণ জীবনকাহিনি নিয়ে রচিত হয়েছে “মাসি-পিসি” গল্প। আহ্াদি নামক ওই তরুণীর মাসি ও পিসি দুজনই বিধবা ও নিঃস্ব। তারা তাদের অস্তিতুরক্ষার পাশাপাশি বিরূপ বিশ্ব থেকে আহ্রাদিকে রক্ষার জন্য যে বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী সংগ্রাম পরিচালনা করে সেটাই গল্পটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। অত্যাচারী স্বামী এবং লালসা-উন্মত্ত জোতদার, দারোগা ও গুন্ডা-বদমাশদের আক্রমণ থেকে আতাদিকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে অসহায় দুই বিধবার দায়িতৃশীল ও মানবিক জীবনযুদ্ধ খুবই প্রশংসনীয় । দুর্ভিক্ষের মর্মস্পর্শী স্মৃতি, জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রাম, নারী হয়ে নৌকাচালনা ও সবজির ব্যবসায় পরিচালনা প্রভৃতি এ গল্পের বৈচিত্র্যময় দিক।


সৃজনশীল প্রশ্ন - ষাটোধর্ব বিধবা ফাতেমা বেগম । নিঃসন্তান এ বৃদ্ধার আপন বলতে কেউ নেই। একদিন সকালে হাটতে বেরিয়ে হঠাৎ তিনি একটি মেয়েকে রাস্তায় কাদতে দেখেন। বৃত্তান্ত শুনে তিনি মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মেয়েটিকে মাতৃত্রেহে আশ্রয় দেন। স্বামীপক্ষ খবর পেয়ে তাকে নিয়ে যেতে চান। মেয়েটি কোনোভাবেই যেতে ইচ্ছুক নন। বৃদ্ধাও মেয়েটিকে যেতে দেননি । এতে তাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মৃত্যুর পূর্বে বৃদ্ধা মেয়েটিকে সমুদয় সম্পত্তি দান করে যান। 

ক. “ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয়'_ উক্তিটি কার?

খ. “যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি'_ উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের মেয়েটি “মাসি-পিসি” গল্পের আহ্বাদির সাথে কীভাবে সঙ্গতিপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “মাসি-পিসি” গল্পের মাসি-পিসি ও উদ্দীপকের বৃদ্ধা একসূত্রে গাথা_ মন্তব্যটি যাচাই কর।

Post a Comment

0 Comments